ওঙ্কার-আহমদ ছফা

বইয়ের পাতায় কী সমগ্র ইতিহাস ধরা যায়? অথবা একটি জাতির স্বাধীনতার ইতিহাসের যে মহাকাব্য রচিত হয়েছে, তা কী শব্দে প্রকাশ সহজসাধ্য?
এই কঠিনতম কাজটি আহমদ ছফা তার ৩৮ পৃষ্ঠার উপন্যাসে করে দেখিয়েছেন। একে উপন্যাস বলবো না ছোট গল্পের বৃহৎ সংস্করণ, তা নিয়ে আলাপ হতে পারে। কিন্তু গঠন, প্রকাশরীতি আর ভাষার ভঙ্গি একে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে।

উপন্যাসের প্রধান চরিত্রের বয়ানে গল্প এগিয়ে গিয়েছে। এই ব্যক্তির কোন নাম নেই, এখানে কোনো চরিত্রেরই নাম নেই, একমাত্র আবু নসর মোক্তার ছাড়া। গল্প শুরু হয় প্রধান চরিত্রের বাবার কথা দিয়ে, যিনি এখনও পূর্বপুরুষের চিন্তা নিজের মনে ধারণ করে আছেন। লেখকের ভাষায়, “তাঁর স্বপ্ন কল্পনা-চিন্তা বাসনার বাগানে পিতৃপুরুষদের প্রেতাত্মারা দলে দলে হানা দিত।”
একসময় মামলায় হেরে অর্থাভাবে বাধ্য হয়ে

আবু নসরের বোবা মেয়েকে বিয়ে করতে হয় নায়ককে। ঠিক যতটা সহজ এবং সরল রৈখিক মনে হয় ঘটনা, ঠিক ততটা না। বাধ্য হয়ে বিয়ে করলেও, নায়কের মনে আক্ষেপ ছিল। কারও সাথে মন খুলে কথা বলতে না পারার আক্ষেপ, কথা শুনতে না পারার আক্ষেপ ঘটনার পরতে পরতে উঠে এসেছে। এরই মাঝে স্ত্রীর কথা বলার চেষ্টা দেখে, নায়কের মনে মমতা জেগে ওঠে। দিন চলে যাচ্ছিল, আসে ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। মিছিলের প্রতি স্ত্রীর আগ্রহ তাকে বিরক্ত করে। একদিন বাড়ির সামনে দিয়ে মিছিল যাওয়ার সময়, আমাদের এই বোবা নায়িকা শরীরের সমগ্র শক্তি দিয়ে কিছু একটা উচ্চারণের চেষ্টা করে। তারপর?

হিন্দু পুরাণ মতে, ‘ওঙ্কার’ হলো আদি ধ্বনি, আমাদের চেতনার মাঝে মিশে আছে এই ধ্বনি। বোবা মেয়েটি যেনো সেই পরাধীন বাংলাদেশের প্রতীক, যার সমগ্র সত্তা জুড়ে এখন ভাব প্রকাশের আকাঙ্ক্ষা। আহমদ ছফার ভাষা তীক্ষ্ণ, উপমায় অলংকৃত আর প্রকাশে ভিন্ন। উপন্যাসের গঠন নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, গুরুত্বে সবসময় প্রথম সারিতে থাকবে।

📷 @thoughtsoftisha
This book has a translated by Roushan Jahan.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top